মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার গত এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকার পর অবশেষে বাংলাদেশ থেকে নতুন শ্রমিক নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে দেশটি। তবে মালয়েশিয়া সরকারের নতুন শর্তগুলোর কারণে পুরোনো সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণেই আবার আটকা পড়তে যাচ্ছে শ্রমবাজার, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় ৭ নভেম্বরের মধ্যে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলির তালিকা পাঠানোর জন্য ১০টি শর্ত দিয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব শর্তের কারণে পুরোনো সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী হবে এবং এসব শর্তটি অনেক রিক্রুটিং এজেন্সি পূরণ করতে পারবে না।
বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য রয়েছে। আর ভালো বেতন, আরামদায়ক আবহাওয়া এবং উন্নত জীবনমানের কারণে দেশটিতে কাজের জন্য বাংলাদেশের তরুণদের আগ্রহ সবসময়ই বেশি। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন খাতে কর্মরত আছেন। তবে, সিন্ডিকেটের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে গত বছরের ৩১ মে থেকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
এই বন্ধের পর থেকেই বাংলাদেশ সরকার মালয়েশিয়ার সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে শ্রমবাজার পুনরায় চালু করার চেষ্টা করছে, কিন্তু দীর্ঘ আলোচনার পরেও সুষ্ঠু সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী, মালয়েশিয়া সরকার ১০টি শর্তে রিক্রুটিং এজেন্সি থেকে আবেদন গ্রহণ করছে। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে - ন্যূনতম ৫ বছরের সন্তোষজনক কার্যক্রম পরিচালনা, ৩ হাজার কর্মী পাঠানোর অভিজ্ঞতা, তিনটি ভিন্ন দেশে কর্মী পাঠানোর প্রমাণ এবং ১০ হাজার বর্গফুট আয়তনের স্থায়ী অফিস।
তবে, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম জানান, এই শর্তগুলো বাস্তবসম্মত নয় এবং বেশিরভাগ এজেন্সি এসব শর্ত পূরণ করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, “১০ হাজার স্কয়ার ফুটের অফিসের প্রয়োজন নেই এবং এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। যেখানে বাংলাদেশ সরকার ৬০০ বর্গফুটের অফিসে এজেন্সি অনুমোদন দেয়, সেখানে মালয়েশিয়া সরকারের ১০ হাজার স্কয়ার ফুটের শর্তের কোনো যৌক্তিকতা নেই। এতে শ্রমিকদের খরচ বাড়বে এবং পুরোনো সিন্ডিকেটের অবৈধ কার্যক্রম আবারও বৈধ হয়ে যাবে।”
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার আগেও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শ্রমিকদের নিয়োগের অভিযোগ উঠেছিল। ২০১৮ সালে দুর্নীতির কারণে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। এর তিন বছর পর ২০২১ সালে নতুন সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে শ্রমবাজার পুনরায় চালু হয়। ২০২২ সালের আগস্টে বাংলাদেশি কর্মী পাঠানো শুরু হয়, কিন্তু ২০২৩ সালের মে মাসে পুনরায় বন্ধ হয়ে যায়।
এখন, মালয়েশিয়ার নতুন শর্তগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, বিশেষ করে যখন দেশের বেশিরভাগ রিক্রুটিং এজেন্সিই এত বড় অফিসের শর্ত পূরণ করতে পারবে না। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের হস্তক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।