অনলাইন ডেস্ক
শীতের আগমনী বার্তা আর হেমন্তের শুরুতে ঝিনাইদহের গ্রামে গ্রামে খেজুর গাছের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। খেজুর রস ও গুড় তৈরির জন্য গাছিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানাচ্ছে, এই অঞ্চলে প্রতি বছর খেজুর রস এবং গুড়ের ব্যাপক উৎপাদন হয় এবং তা সারা দেশে সরবরাহ করা হয়।
ভোরবেলা থেকেই গাছিরা তাদের খেজুর গাছের পরিচর্যা করতে বের হন। তারা ঠুঙ্গি, বাইলধারা, দড়ি ও ধারালো দা নিয়ে গাছের মাথা পরিষ্কার করে, যাতে গাছ প্রস্তুত হয়। দুই সপ্তাহ বিশ্রামের পর গাছগুলি রস সংগ্রহ উপযোগী হয়ে ওঠে। গাছিরা জানান, খেজুর গাছের সংখ্যা কমে গেলেও তাদের কাজ থেমে নেই।
রামচন্দ্রপুর গ্রামের গাছি আনিছুর রহমান বলেন, "কার্তিক মাসের শুরু থেকে আমরা খেজুর গাছ তোলার কাজ শুরু করি। এক সপ্তাহ পর থেকে রস পাওয়া যাবে।" অন্যদিকে, মজিবার রহমান বলেন, "৪৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছি। এখন নতুন গাছি আর পাওয়া যায় না। যদি এভাবে চলতে থাকে, ঝিনাইদহের ঐতিহ্য খেজুর রস, গুড় ও গাছি সবই হারিয়ে যাবে।"
ঝিনাইদহের খেজুর গুড় ও রস দেশের ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে পরিচিত। এখানকার খেজুর গাছগুলি প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জলবায়ু কারণে ভালো জন্মে। প্রতিবছর ৮০০-৮৫০ টন খেজুর গুড় উৎপাদন হয় এবং এটি সারা দেশে সরবরাহ করা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলায় ১ লাখ ৪২ হাজার ২৩৫টি খেজুর গাছ রয়েছে, যার মধ্যে ১ লাখ ১২ হাজার ৭৬০টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ২৪১ লিটার খেজুর রস এবং ৮৭২ মেট্রিক টন খেজুর গুড় উৎপাদন হয়, যা দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-এর উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, "নিরাপদ উপায়ে খেজুর রস সংগ্রহ এবং গুড় উৎপাদন নিয়ে গাছিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। গত বছর অনেক গাছিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল, এবারও এটি চলমান থাকবে।"
কোটচাঁদপুরের আনজের বিশ্বাস বলেন, "খেজুর গুড়ের স্বাদ সবচেয়ে মিষ্টি। শীত এলেই শহর-গ্রামের মানুষ খেজুরের রস ও গুড় নিতে আমাদের কাছে আসে। এগুলো আমাদের গ্রাম-গঞ্জের ঐতিহ্য।" এমনকি গৃহবধূ আছিয়া বেগম জানান, "খেজুর রস, গুড় ও পাটালি বিক্রি করে শীতের মৌসুমে আমাদের বাড়তি আয় হয়।"
এভাবে, ঝিনাইদহের গাছিরা তাদের ঐতিহ্য এবং খেজুর গুড়, রসের উৎপাদন টিকিয়ে রাখতে কাজ করছেন। এ বছর ৯০০ মেট্রিক টন খেজুর গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং আগামী সপ্তাহ থেকে রস সংগ্রহ শুরু হয়ে যাবে।